হ–বাংলা নিউজ: অভিবাসীদের দেশ হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নির্বাচনে অভিবাসন ইস্যুটি খুব বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে না। চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবারের নির্বাচনে এখনো কোন প্রার্থী অভিবাসীদের সমস্যা নিয়ে কোন কথা বলেননি। প্রার্থীদের বিতর্কে স্থান পায়নি অভিবাসীদের কোন স্বার্থ। উল্টো এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অভিবাসীদের মধ্যে ভয়ভীতি ছড়িয়ে দিতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। শুরু হয়েছে নতুন করে ধরপাকড়। কার্যকর করা হয়েছে পাবলিক চার্জের গ্যাঁড়াকল।
বহু জাতিগোষ্ঠীর দেশ যুক্তরাষ্ট্রে যেকোনো সামাজিক বা রাজনৈতিক বিতর্কে অভিবাসন ইস্যু থাকবে—এমনটি মনে করা স্বাভাবিক। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০১৬ সালে প্রথম দফায় ক্ষমতায় এসেই বার্তা দিয়েছেন—এ দেশ অভিবাসীদের ঘামে–শ্রমে পুষ্ট হবে। তবে অভিবাসীদের নানা কায়দা পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী হিসেবে দমিয়ে রাখা হবে। কখনো মুসলমান, কখনো ভিন্ন বর্ণের কারণে ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীরা নিজেদের নতুন করে আবিষ্কার করেছে। অভিবাসীদের কোন প্রত্যাশা নেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে। যাদের কাছে প্রত্যাশা আছে, তারাও এক রহস্যময় নীরবতা পালন করছেন।
দেয়াল নির্মাণ হবে, সীমান্ত দিয়ে অভিবাসীদের প্রবাহ বন্ধ হবে—ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই এসব কথা ডোনাল্ড ট্রাম্প বলে আসছেন। এর মধ্যে নানা প্রশাসনিক আদেশ দিয়ে নাজুক করে তুলেছেন পুরো পরিস্থিতি। বলেছেন, পারিবারিক অভিবাসন বন্ধ করে দেবেন। এর মধ্যেই পাবলিক চার্জ নামের গ্যাঁড়াকলে ফেলে দিয়েছেন অসহায় অভিবাসীদের। অভিবাসী পরিবারগুলো এখন স্বাস্থ্য সেবা, ফুড স্ট্যাম্প নিতে ভয় পাচ্ছে। হাজার হাজার পরিবার এ নিয়ে সমস্যায় দিন কাটাচ্ছে। অথচ এ নিয়ে রাজনীতিবিদেরা কোনো কথাই বলছেন না।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতিমধ্যে মেধাভিত্তিক অভিবাসন চালু করার ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। এসব নিয়ে অভিবাসীদের মধ্যে চরম উৎকণ্ঠা থাকলেও তাদের পক্ষে কোন প্রার্থীকে সরব হতে দেখা যাচ্ছে না।
ডেমোক্র্যাটপ্রার্থী জো বাইডেন বা ডেমোক্রেটিক দলের নেতারাও এ নিয়ে সোচ্চার ভূমিকা রাখছেন না। কেউ বলছেন না, ৩ নভেম্বর ট্রাম্পকে হারাতে পারলে অভিবাসীদের সমস্যাগুলোর সমাধান করা হবে। বলছেন না, অভিবাসীদের মাধ্যমে দেশটি নিত্যদিন এগিয়ে যায়। সেই অভিবাসীদের সমস্যাকে দেখা হবে অগ্রাধিকার দিয়ে।
অভিবাসীদের স্বার্থ বাদ দিয়ে উল্টো মার্কিন অভিবাসন বিভাগ দেশজুড়ে আবার নথিপত্রহীন অভিবাসীদের ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করেছে। নথিপত্রহীন অভিবাসীদের মধ্যে একদিকে যেমন করোনার তাড়া, অন্যদিকে ইমিগ্রেশন ও কাস্টম এজেন্টদের তাড়া—এমন পরিস্থিতি তাদের জন্য আরও ভীতিকর করে তুলেছে সবকিছু। অক্টোবরের শুরুতে ১৭০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ইমিগ্রেশন এজেন্টরা।
শুধু নিউইয়র্ক নগর থেকেই ৫৪ জনকে আটক করা হয়েছে। ৩ অক্টোবর থেকে ৯ অক্টোবরের মধ্যে রাজ্যের ছয়টি এলাকা থেকে এদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটির এক তথ্য বিবরণীতে এসব জানানো হয়েছে।
অভিবাসী অধ্যুষিত হিসেবে পরিচিত নগরগুলোতে অভিবাসন এজেন্টদের অভিযান নিয়ে অভিবাসী গ্রুপগুলোর মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। নিউইয়র্ক ছাড়াও সিয়াটল, ফিলাডেলফিয়া, ওয়াশিংটন ডিসি, সিয়াটল, বাল্টিমোর, ডেনভারে গ্রেপ্তার হওয়া অভিবাসীদের মধ্যে এমনও রয়েছেন যাদের আগেই স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভিন্ন অপরাধে গ্রেপ্তার করেছিল। পরে তাদের ছেড়েও দিয়েছে। এখন বেছে বেছে এদের গ্রেপ্তার করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়নের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ দাবি করছে, গ্রেপ্তার হওয়া এসব অভিবাসীদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
তথ্য: সংগ্রহীত