হ-বাংলা নিউজ : যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রবাসীরাও এবার উৎসাহ নিয়ে অংশ নিয়েছেন। জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ভোট দেওয়ার এমন উৎসবের আমেজ আগে কখনো দেখা যায়নি বলে অভিমত তাদের।
মঙ্গলবার দেশটির নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সি, পেনসিলভেনিয়া, মিশিগান, জর্জিয়া, ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা, ভার্জিনিয়া ও টেক্সাসের বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকার কেন্দ্রগুলোতে বাংলাদেশিদের উপস্থিতি ছিল আশাব্যঞ্জক।
এ প্রসঙ্গে ডেমক্র্যাটিক পার্টির কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট লিডার অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী বলেন, “গত চার বছরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অনিয়ম আর অপশাসনে মানুষ অতিষ্ঠ। পুনরায় ট্রাম্প জয়ী হলে মুসলিম ব্যান বাড়বে এবং অভিবাসন সংকুচিত করার হুমকি রয়েছে। এমন পরিস্থিতির অবসান চান বলেই সবাই বাইডেনের পক্ষে মাঠে নেমেছেন।”
কমিউনিটি সূত্রে জানা গেছে, নাগরিকত্ব গ্রহণকারির ৮৫% এর বেশি ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন বেশ ক’বছর আগেই। তবে গত নির্বাচনে এর অর্ধেকও কেন্দ্রে যাননি, ভোট দেওয়া দূরের কথা। মহামারীতে এবার অনেকেই বেকার হয়ে ঘরে থাকার কারণে ভোটে আগ্রহ বেড়েছে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।
তবে পারিবারিক কোটায় আত্মীয়-স্বজনকে যুক্তরাষ্ট্রে আনার কার্যক্রমে কঠোরতা অবলম্বনের হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্প হটানোর মনোভাব তৈরি হয়েছে অনেকের মধ্যে। সে তাগিদেই বাইডেন-কমলা হ্যারিসকে ভোট দেন প্রবাসীদের প্রায় সবাই। ফ্লোরিডা, টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া, ভার্জিনিয়া, ম্যারিল্যান্ড, মিশিগান, পেনসিলভেনিয়া, নিউ জার্সি, টেক্সাস, কানেকটিকাট, ম্যাসেচুসেট্স থেকে পাওয়া সংবাদে জানা গেছে, ডাকযোগে ও আগাম ভোট কেন্দ্রেও অসংখ্য প্রবাসী সরব ছিলেন।
বাংলাদেশশি অধ্যুষিত কেন্দ্রগুলোতে বাংলা সাইনের পাশাপাশি ব্যালটেও বাংলা সংযোজন করা হয়। অনেক কেন্দ্রে বাঙালি অনুবাদক ছিলেন। ফলে কারো কোন সমস্যা হয়েছে বলে জানা যায়নি। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সবাই কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়েছেন।
নিউ ইয়র্কের ব্রঙ্কসে মো. এন মজুমদার, কুইন্সের জ্যামাইকায় পাবলিক লাইব্রেরিতে আসা ভোটারদের স্বাগত জানান খোরশেদ খন্দকার। আর লং আইল্যান্ডে ডিয়ারপার্ক কেন্দ্রে ছিলেন গোলাম ফারুক শাহীন। বাঙালিদের বন্ধু হিসেবে পরিচিত রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান পিটার কিং এর ছেড়ে দেওয়া আসনে ডেমক্র্যাট প্রার্থী জ্যাকি গর্ডনের বিজয়ে প্রবাসীদের নিয়ে তিনি কাজ করছেন বেশ কয়েক সপ্তাহ থেকে।
জ্যাকসন হাইটসের একটি কেন্দ্রে অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরীকে ভোটারদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করতে দেখা যায়। এসময় মঈন জানান, ভোটাধিকার প্রয়োগের মধ্যেই প্রশাসনে নিজেদের অবস্থানের জানান দেওয়া যায়। এবারের নির্বাচনে তেমনি ঘটনা ঘটলো বাংলাদেশি-আমেরিকানদের ক্ষেত্রেও।
সামনের বছর যারা সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে অংশ নিতে চান তারাও বেশ সোচ্চার ছিলেন বিভিন্ন কেন্দ্রে। জ্যাকসন হাইটসের ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক ফাহাদ সোলায়মানকে সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে বাইডেন-কমলার পক্ষে।
এদিকে ওয়াশিংটন ডি.সি. থেকে মুক্তিযোদ্ধা-সাংবাদিক হারুন চৌধুরী জানান, অধিকাংশ মানুষই আগাম ভোটে অংশ নেওয়ায় মঙ্গলবার কোন কেন্দ্রেই তেমন ভিড় ছিল না। ভার্জিনিয়ায় বাইডেনের পক্ষেই বেশি আগাম ভোট পড়েছে বলে বিভিন্ন জরিপে উল্লেখ করা হয়।
বুধবার ভোররাতে পাওয়া সর্বশেষ সংবাদে পেনসিলভেনিয়া থেকে জানা গেছে, স্টেট অডিটর জেনারেল পদে নীনা আহমেদ পেয়েছেন ৮ লাখ ১৮ হাজার ভোট। তার রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী টিমুথি ডিফোর পেয়েছেন ৯ লাখ ৪৭ হাজার ভোট।
তবে ফিলাডেলফিয়া অঞ্চলে পোস্টাল ব্যালট এখনও গণনায় আসেনি, ৩০% প্রেসিঙ্কটের ফলাফল এটি। পোস্টালে এসেছে ২৫ লাখ ভোট। এর অধিকাংশই ডেমক্র্যাটদের। সেগুলো যথাযথভাবে গণনায় এলে নীনার বিজয়ের সম্ভাবনা প্রবল বলে মনে করছেন তার নির্বাচনী টিমের কর্মকর্তারা।
অপরদিকে টেক্সাসের কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট-৩১ থেকে ডেমক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ডোনা ইমাম পিছিয়ে রয়েছেন বলে জানা গেছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৮২% এলাকার ভোট গণনায় রিপাবলিকান প্রার্থী জন কার্টার পেয়েছেন ২ লাখ ৯ হাজার ৩৫২ ভোট। অপরদিকে ডোনা পেয়েছেন ১ লাখ ৭২ হাজার ৭২৯ ভোট।
তথ্যঃ সংগ্রহীত