হ-বাংলা নিউজ : অবশেষে মিশিগান অঙ্গরাজ্যের আদালতে দায়ের করা ভোট কারচুপির মামলা তুলে নিল ট্রাম্প শিবির। এর আগে রাজ্যের ডেট্রয়েটে ওয়েইন কাউন্টিতে ভোট গণনা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান দুই রিপাবলিকান নেতা মনিকা পামার ও উইলিয়াম হার্টম্যান। চাপ দিয়ে তাদের কাছ থেকে ভোটের স্বীকৃতি আদায় করা হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট তাদের ফোন করার পর নিজেদের মত বদলান ওই দুই রিপাবলিকান।
ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, গত মঙ্গলবার মনিকা পামার ও উইলিয়াম হার্টম্যানসহ রিপাবলিকান দলের সব নির্বাচনী কর্মকর্তাই ফলাফল মেনে নিয়েছেন বলে বোর্ড থেকে জানানো হয়। যদিও এদিনে ওয়েইন কাউন্টির নির্বাচন বোর্ডের এ দুই রিপাবলিকান প্রথম দফা ভোট সার্টফাই করতে অস্বীকার করেন। ভোটে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন নিরাপদ ব্যবধানে এগিয়ে থাকার পর তাদের এমন অবস্থানে দ্রুত প্রতিক্রিয়া হয়। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে অঙ্গরাজ্যের নির্বাচন বোর্ড থেকে জানানো হয়, ভোট সর্বসম্মতিক্রমে সার্টিফাই করা হয়েছে।
কাউন্টির নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারপারসন মনিকা পালমার ও সদস্য উইলিয়াম হার্টম্যান গত বুধবার রাতে একটি এফিডেভিট জমা দিয়ে বলেন, তাদের চাপ দিয়ে সম্মতি আদায় করা হয়েছে। কাউন্টির ভোট নিয়ে করা নিরীক্ষার ফলাফল পাওয়ার আগে তারা এতে সম্মতি দেবেন না।
এর প্রতিক্রিয়ায় ওয়েইন কাউন্টির নির্বাচন বোর্ডের ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেমোক্র্যাট জনাথন কিনোলচ বলেন, রিপাবলিকান সদস্যদের এমন অবস্থান নেওয়ার সময় পেরিয়ে গেছে। তাদের সম্মতির পরই কাউন্টি থেকে সার্টিফাই করে ভোটের ফল অঙ্গরাজ্যের নির্বাচন বোর্ডে পাঠানো হয়। এখন তা আবার ফিরিয়ে আনার কোনো নিয়ম নেই। রিপাবলিকানদের এমন কর্মকাণ্ড দেশের গণতান্ত্রিক নানা প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ ও নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করবে। ট্রাম্প শিবিরের চাপের কারণেই এখানকার রিপাবলিকান দুই সদস্য এখন আগের অবস্থান থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন। এ নিয়ে এখন হয়তো আরেকটি মামলা করা হবে।
ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী জো বাইডেন মিশিগানে ১ লাখ ৪৮ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। রাজ্যের ওয়েইন কাউন্টিতে ট্রাম্পের চেয়ে দ্বিগুণ ভোট পেয়েছেন বাইডেন। বাংলাদেশিসহ ব্যাপক অভিবাসীদের বসবাস এই কাউন্টিতে।
মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ওয়েইন কাউন্টির নির্বাচন কার্যালয় থেকে ভোটের ফল সরকারিভাবে অনুমোদন করা-না করা নিয়ে নাটকীয় ঘটনার সূচনা ঘটে। রাজ্যের নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, কাউন্টি বোর্ড অব ক্যানভাসারস’র নির্দিষ্ট তারিখের আগেই নির্বাচনের ফল সরকারিভাবে অনুমোদন করার কথা। কিন্তু এ নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মিশিগানের গুরুত্বপূর্ণ এ কাউন্টিতে ভোটের ফল অনুমোদন নিয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্রুত টুইট করে এ নিয়ে অভিনন্দন জানান। ট্রাম্প বলেন, ‘মিশিগান ভোটের ফল অনুমোদন করতে অস্বীকার করেছে। যুক্তরাষ্ট্র গর্বের সঙ্গে দাঁড়াচ্ছে।’
এ ঘটনার পর রিপাবলিকান প্রচার শিবির সক্রিয় হয়ে ওঠে। ট্রাম্পের সমর্থকেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিশিগানের ফল পাল্টে যাচ্ছে বলে বার্তা দিতে থাকেন। কাউন্টি ক্যানভাসারস বোর্ডে দলীয় সদস্য থাকলেও, ভোটের ফল মেনে না নিয়ে অনুমোদন অস্বীকার করার কোনো নজির নেই। এ নিয়ে দ্রুত মিশিগানের রাজ্যের নির্বাচন বোর্ড সক্রিয় হয়ে ওঠে। রাজ্যের সেক্রেটারি অব স্টেট জোসেলিন বেনসন জানান, নির্বাচন বোর্ড ভোটের ফল অনুমোদনের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভোটে কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা, তা নিরীক্ষার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। সবকিছু ভালোভাবে যাচাই করার জন্য প্রথমে তারা অনুমোদনের বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। যাচাই শেষে দেখা যায়, ছোটখাটো ত্রুটি থাকলেও ভোট নিয়ে কোনো অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ওয়েইন কাউন্টি বোর্ডের ভাইস চেয়ারপারসন জোনাথন কিনলচ ভোটের ফল অনুমোদন নিয়ে রিপাবলিকান সদস্যদের প্রথম দফা আচরণকে দায়িত্বজ্ঞানহীন বলে মন্তব্য করেছেন। মিশিগান রাজ্যের গভর্নর গ্রেচেন হুইটমার এ নিয়ে এক বিবৃতিকে বলেছেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে এটা ছিল আরেকটি ব্যর্থ প্রয়াস। তবে মিশিগানের মানুষ কথা বলেছে। এ রাজ্যে জো বাইডেন ১ লাখ ৪৮ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছেন। অনুমোদন প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করা হবে। রাজ্যের নির্বাচনী বোর্ড সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অনুমোদনের কাজ সম্পন্ন করবে।
মিশিগান অঙ্গরাজ্যের কর্মকর্তারা বলছেন, নিয়ম অনুযায়ী এখন আর স্বীকৃতি ফিরিয়ে নিতে পারবেন না তারা। মিশিগানে বড় ব্যবধানে ট্রাম্পকে পরাজিত করেছেন জো বাইডেন। চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য এখন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলোর ভোট সার্টিফিকেশনের কাজ চলছে।