হ-বাংলা নিউজ : নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে প্রার্থিতার ঘোষণা আগেই দিয়েছেন কমিউনিটির পরিচিত মুখ অ্যাটর্নি সোমা সায়ীদ। তিনি কুইন্স কাউন্টি উইমেন্স বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট। ‘নিউইয়র্ক স্টেট বার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারপারসন অ্যাটর্নি অ্যাট ল’ সোমা সায়ীদ আগামী নির্বাচনে ডিস্ট্রিক্ট-২৪-এ কাউন্সিলম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সোমা সায়ীদ। করছেন মতবিনিময়। নির্বাচনী প্রচারের অংশ হিসেবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলছেন।
নির্বাচনে জিতলে কী করতে চান, সেসব লক্ষ্য ঠিক করেছেন সোমা সায়ীদ। এর মধ্যে রয়েছে হেলথ, জাস্টিস, ইকোনমিক জাস্টিস, পুলিশ রিফর্ম, অ্যাফোর্ডেবল হাউজিং, এডুকেশনসহ জনসমাজের বিরাজমান নানা ইস্যু। সমতার বিষয়টি নির্বাচনী প্রচারণায় প্রাধান্য দিচ্ছেন তিনি।
কেন নির্বাচন করছেন এমন প্রশ্নে সোমা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র উন্নত দেশ, এ দেশে সবার জন্য বিচার ব্যবস্থা সমান। এর মধ্যেও অনেক অসংগতি রয়েছে। আমাদের কমিউনিটির মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করতে চান তিনি।
বিচার ও সমতা বিষয়ে সোমা বলেন, সিঙ্গেল পেয়ার হেলথ কেয়ার আমাদের নিউইয়র্ক নগরবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা। এটির মাধ্যমে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনে স্বস্তি ফিরে আসবে। এই শহরে আনুমানিক ৯০ ভাগ মানুষের বার্ষিক আয় ২৮০০ ডলার। আমি সিঙ্গেল পেয়ার হেলথ কেয়ার অ্যাক্টের জন্য লড়াই করে যাব। এতে এই শহরের মানুষের চিকিৎসা খাতে ব্যয় কমবে এবং নিউইয়র্ক রাজ্য বছরে ১৫ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করতে পারবে।
ইকোনমিক জাস্টিসের সোমার দৃষ্টিভঙ্গি, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সব সময় লসে থাকে। এই মহামারিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ছোট দোকানিদের। তাদের জন্য প্রতি মাসে এক হাজার ডলার মহামারি সহায়তা বিল পাসে কাজ করতে হবে। সিটির অর্থনীতির চাকাকে আবার স্বাবলম্বী করতে ক্ষুদ্র ব্যবসাকে চালু রাখতে হবে।
পুলিশ রিফর্ম সোমা বলেন, অপরাধ অপরাধই। সিভিলিয়ান কমপ্লেন রিভিউ বোর্ডকে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির অফিসের সঙ্গে রিপ্লেস বা অধিভুক্ত করতে হবে। এখনই সময় জবাবদিহি ব্যবস্থা চালু করার। কমিউনিটি পুলিশিংয়ের জন্য বাজেট বরাদ্দ করতে হবে।
নগরীর হাউজিংয়ের তাঁর পরিকল্পনা সম্পর্কে জানাতে গিয়ে সোমা বলেন, অ্যাফোরডেবল হাউজিং একটি মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার। আমাদের সিটি এই মৌলিক অধিকার পূরণে এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক অ্যাফোরডেবল হাউজিং বরাদ্দ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। নগরে গৃহহীনদের জন্য আরও হোমলেস সেন্টার প্রয়োজন। সেটা করতে হবে। আমি প্রেভিটরি ল্যান্ড লর্ডদের বিরুদ্ধে লড়াই করব।
অ্যাটর্নি সোমা সায়ীদ প্রথম মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় নারী অ্যাটর্নি, যিনি ৯০ বছরের পুরোনো একটি সংগঠনের (কুইন্স, নিউইয়র্কের) প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হয়েছেন। এটা মুসলিম কমিউনিটি, দক্ষিণ এশিয়া তথা বাংলাদেশি কমিউনিটিকে প্রতিনিধিত্ব করেছে।
এই সংগ্রামী নারী একজন অ্যাটর্নি সংগঠক এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তিনি নিজের নামে গড়ে তুলেছেন অ্যাটর্নি সোমা সায়ীদ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন ল’ ফার্ম। তিনি দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা পরিচালনা করে থাকেন। তিনি ২০০৪ সালে নিউইয়র্ক বারের সদস্য হন। ১৬ বছর ধরে নিউইয়র্কে আইন পেশায় জড়িত। তিনি কাজ করেন দ্য সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব নিউইয়র্ক, দ্য ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব নিউইয়র্ক, দ্য সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট ব্যাংকক্রাপসি কোর্ট, দ্য ইউএস ট্যাক্স কোর্ট এবং দ্য সেকেন্ড সার্কিট কোর্ট অব আপিলসে।
সোমা সায়ীদ ১২ বছর বয়সে টাঙ্গাইল থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে ।এখানে আসার পর পরই তিনি স্বপ্ন দেখেন অ্যাটর্নি হওয়ার। সে হিসেবেই নিজেকে প্রস্তুত করেন। আলবেনি ল স্কুল থেকে জুরিস ডক্টর (জেডি) ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। তাঁর বাবা আফতাব উদ্দীন সায়ীদ পেশায় আইনবিদ। তার মা আমেনা সায়ীদ বাংলাদেশে দুটি গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁর বাবা সরকারি চাকরি ছেড়ে এ দেশে এসে এমবিএ ডিগ্রি নেন, এরপর সিপিএ হন।
সোমা বলেন, শুধু অংশ নেওয়ার জন্যই নির্বাচন করছেন না। তিনি নির্বাচন জয়ী হতে চান। তবে কমিউনিটির সহযোগিতা ছাড়া এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশি কমিউনিটিতে জেনারেশন গ্যাপ চলছে। এটি দূর করতে হবে। কেউ নির্বাচন করলে তাকে হারাতে কমিউনিটির মধ্যে যাতে কোনো নেতিবাচক গ্রুপিং তৈরি না হয়, সেটাও খেয়াল রাখতে হবে।
সোমা বলেন, বাংলাদেশি মার্কিন কমিউনিটির তৃতীয় জেনারেশন চলছে। এখন সময় এসেছে, নিজেদের কমিউনিটি থেকে নেতা তৈরি করার। ভালো ও যোগ্য প্রার্থী হলে তাকে সবার সাহায্য করতে হবে। তিনি বলেন, ‘আশা করছি, একজন যোগ্য প্রার্থী হিসেবে সবাই ভোট দেবেন, সবাই সহযোগিতায় এগিয়ে আসবেন।
তথ্যঃ সংগ্রহীত