হ-বাংলা নিউজ : জার্মানিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমে বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে কঠোর লকডাউনের প্রস্তাব করেছেন চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল। একই সুরে কথা বলেছেন জার্মানির ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সের সদস্যরাও। এ ছাড়া জার্মানির সংক্রমণ রোগবিষয়ক গবেষণাকেন্দ্র রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটও লকডাউনের পক্ষে মত দিয়েছে।
স্থানীয় সময় গত সোমবার চ্যান্সেলর ম্যার্কেল নিজ দলের পার্লামেন্টারি কমিটির সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের আগেই কঠোর লকডাউনের কথা বলেছেন। তিনি বলেন, জার্মানিতে চলমান লকডাউন ব্যবস্থা করোনাভাইরাস সংক্রমণ কমাতে পারছে না। এই শীতে নতুন করোনা বিধিনিষেধ ছাড়া সংক্রমণের বিস্তার রোধ করা যাবে না।
প্রায় ৮ কোটি ৩০ লাখ জনসংখ্যার দেশটিতে উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থা রয়েছে। তবু এখন প্রতিদিন প্রায় ১৫ হাজার মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং গড়ে ৪০০ জনের মৃত্যু ঘটছে। নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে জার্মানিতে লকডাউন শিথিল করা হয়।
জার্মানিতে ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের উৎসব ঘিরে সব জায়গায় বিশেষ ক্রিসমাস বাজার বন্ধ রয়েছে। ডিসেম্বরের শুরু থেকেই যেকোনো পারিবারিক অনুষ্ঠানে ১০ জনের বেশি জড়ো হওয়াসহ পারিবারিক অনুষ্ঠানেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী পানশালা, রেস্তোরাঁ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ফিটনেস সেন্টার, সুইমিংপুল আগামী ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। স্কুল ও কিন্ডারগার্টেন খোলা থাকলেও বড়দিন উৎসবের নিয়মিত ছুটির দুই দিন আগেই বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। রেল, বাসসহ সব গণপরিবহন ও সুপারমার্কেট এবং কিছু শহরের কেন্দ্রে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মাস্ক না পরলে জরিমানা করা হচ্ছে। এত বিধিনিষেধের পরও দেশটিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমানো যাচ্ছে না।
এদিকে লকডাউন নিয়ে বিভিন্ন রাজ্য সরকারের মতপার্থক্যের কারণে লকডাউন বিধিনিষেধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল হতাশা প্রকাশ করেন।
জার্মানির পরিবেশবাদী সবুজ দলের নেতা ভিনফ্রিড কার্টচমান বলেন, ‘বড়দিনের আগেই আমাদের কঠোর লকডাউন জারি না হলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ শুরু হবে।’
জার্মান হসপিটাল অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান জেরাল্ড গাস বলেন, এ বছরের মার্চ মাসের তুলনায় গত কয়েক সপ্তাহে হাসপাতালগুলোতে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর হার ক্রমেই বাড়ছে। এই সংখ্যা মার্চের তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি। এভাবে রোগীর হার বাড়তে থাকলে হাসপাতালগুলোতে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটগুলোর পরিস্থিতি সংকটের মুখে পড়বে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে জার্মানির ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স ও সংক্রমণ রোগবিষয়ক গবেষণাকেন্দ্র রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের সভাপতি লোথার ভিলার জার্মানির রাজনীতিবিদদের প্রতি শিগগির নতুন করে কঠোর লকডাউন জারির আহ্বান জানিয়েছেন। তা না হলে বড়দিনের সময় সংক্রমণের হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়বে বলে তিনি মনে করছেন।
জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়ান স্পান জানিয়েছেন, এ মাসের শেষে বা নতুন বছরের প্রথম দিকেই জার্মানিতে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হবে। এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিকভাবে ৮০ বছর বয়সের ওপর লোকজন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন পাবেন। এ ছাড়া যাঁরা বৃদ্ধাশ্রম ও চিকিৎসাসেবায় জড়িত, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাঁরাও ভ্যাকসিন পাবেন।
স্থানীয় সময় আজ মঙ্গলবার জার্মানির সংক্রমণ রোগবিষয়ক গবেষণাকেন্দ্র রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় জার্মানিতে নতুন করে ১৪ হাজার ৫৪ জন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন, মারা গেছেন ৪২৩ জন।
তথ্যঃ সংগ্রহীত