হ-বাংলা নিউজ : করোনা মহামারির কারণে এই প্রথম বিপুলসংখ্যক মার্কিনকে খাদ্য সহায়তার জন্য ফুড ব্যাংকগুলোর সামনে লাইনে দাঁড়াতে গেছে। ২০০৭-০৯ সময়ের অর্থনৈতিক মন্দার সময়ও এমন দেখা যায়নি। এমনকি করোনা মহামারির প্রথম ঢেউয়ের সময়ও খাদ্য সহায়তার জন্য এত মানুষকে একসঙ্গে সারিবদ্ধ হয়ে ফুড ব্যাংকের সামনে দাঁড়াতে দেখা যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ২ লাখ ৮০ হাজারের চেয়ে বেশি মানুষ। এ সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। শীতের আগমনবার্তা সঙ্গে সঙ্গে জেঁকে বসেছে আতঙ্ক। সংক্রমণ বাড়ছে হু হু করে। এরই মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের বেশ কিছু অঞ্চল লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে। মহামারির কারণে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় লাখো মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ বেকার, যা গত ১০০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম। সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদন থেকে এমনটিই জানা গেছে।
এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম ক্ষুধা বিরোধী সংগঠন ‘ফিডিং আমেরিকা’ জানিয়েছে, গত মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত তারা ৪ দশমিক ২ বিলিয়ন (৪২০ কোটি) খাবার (মিল) বিলি করেছে। করোনা মহামারির কারণে ফুড ব্যাংক থেকে খাদ্য সহায়তা নেওয়া লোকের সংখ্যা ৬০ শতাংশ বেড়েছে। যারা খাদ্য নিতে আসছেন, তাঁদের ৪০ শতাংশই এমন সহায়তা প্রথম নিচ্ছেন।
ফিডিং আমেরিকা জানিয়েছে, খাদ্যের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। সংস্থাটির ১৮১টি ফুড ব্যাংক বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে গত বছরের এই সময়ের তুলনায় ৫৭ শতাংশ খাদ্য বেশি বিতরণ করেছে। বছর শেষে আরও ৫ কোটি মিল তাদের সরবরাহ করতে হবে বলে তারা ধারণা করছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দেড় কোটি বেশি।
মিশিগানের মেট্রো ডেট্রয়েটের গ্লানার্স কমিউনিটি ফুড ব্যাংকের তথ্যমতে, করোনার জন্য খাদ্যের চাহিদা বেড়েছে। অনেকেই এই প্রথম খাদ্য সহায়তা চেয়েছেন।
সংস্থাটির মুখপাত্র ক্রিস্টিন সোকুল বলেন, মহামারি শুরুর পর প্রতি মাসে গড়ে ৬৭ লাখ পাউন্ড খাবার বিতরণ করেছে সংস্থাটি। মহামারির আগে মাসে গড়ে ৩৫ থেকে ৪০ লাখ পাউন্ড খাবার বিতরণ করত তারা।
ফিডিং আমেরিকার এক রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের পর্যটন শিল্পের মক্কা বলে পরিচিত নেভাদার ক্যাসিনো, রেস্তোরাঁ, হোটেল, মোটেল ব্যবসা করোনায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বিবেচনায় অঙ্গরাজ্যটি বর্তমানে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে। এ ছাড়া মিসিসিপি, আরাকানসাস, আলাবামা ও লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যে বছরের শেষ দিকে প্রতি পাঁচ পরিবারের একটিতে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বল্প বেতনের কর্মীরা অর্থনৈতিক সংকট ও কষ্টের মধ্যে আছেন। ক্ষুধাবিরোধী সংস্থা ফুড রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশন সেন্টারের সেপ্টেম্বর মাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যাদের আয় মহামারির আগে বছরে ৫০ হাজার ডলার ছিল—এমন প্রতি চারজনের একজনের পর্যাপ্ত খাদ্য নেই। অনেকে রাজ্য থেকে ফুড স্ট্যাম্পের সাহায্য নিচ্ছেন। তবে ফুড স্ট্যাম্পের জন্য বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন রকম নিয়ম রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া থেকে সান আন্তোনিও, টেক্সাস থেকে টলেডো, ওহাইও, অরল্যান্ডো, ফ্লোরিডা, নিউইয়র্কের বিভিন্ন স্থানে মানুষজনকে ফুড ব্যাংকের সামনে খাদ্যের জন্য লাইন দিতে দেখা যাচ্ছে।
তথ্যঃ সংগ্রহীত