হ-বাংলা নিউজ : যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতি ছিল নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে। দেশের অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের তুলনায় মৃত্যু ও সংক্রমণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই অঙ্গরাজ্য। ফলে করোনা মহামারি শুরুর পর থেকেই এ অঙ্গরাজ্যের সবচেয়ে জনবহুল ও ব্যয়বহুল নগর নিউইয়র্ক থেকে মানুষের অন্যত্র স্থানান্তরের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
ফক্স বিজনেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে নিউইয়র্ক নগর থেকে মানুষজন অন্যত্র চলে যাচ্ছে। তাদের মালামাল স্থানান্তর নিয়ে কোম্পানিগুলো খুবই ব্যস্ত সময় পার করছে। মালামাল পরিবহনের প্রতিষ্ঠান রোডওয়ে মুভিংয়ের সভাপতি রস স্পেয়ার ফক্স নিউজকে বলেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানটি এই গ্রীষ্মে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে সবচেয়ে ব্যস্ত সময় পার করেছে।
মে ফ্লাওয়ার ও ইউনাইটেড ভ্যান লাইন্স নামের দুটি প্রতিষ্ঠানও রস স্পেয়ারের সুরে কথা বলছে। নিউইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে দেওয়া তথ্যমতে, মে ফ্লাওয়ার ও ইউনাইটেড ভ্যান লাইন্স নিউইয়র্ক নগর থেকে অন্যান্য অঙ্গরাজ্যে প্রায় এক হাজার পরিবারের মালামাল স্থানান্তর করেছে। এদের মধ্যে ২৮ শতাংশ ফ্লোরিডা ও ক্যালিফোর্নিয়ায় এবং ১৬ শতাংশ টেক্সাস ও নর্থ ক্যারোলিনায় স্থানান্তরিত হয়েছে।
ফ্ল্যাট রেট নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান বলছে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৪৬ শতাংশ বেশি মালামাল স্থানান্তর করেছে।
ক্রমাগত হারে লোকজন অন্যত্র স্থানান্তরের ফলে ভাড়াটিয়া না পেয়ে বাড়ির মালিকেরা মর্টগেজ ও অন্যান্য বিল পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে। সিএনএনের তথ্যমতে, শুধু অক্টোবর মাসেই নগরের ম্যানহাটন এলাকায় প্রায় ৫.৫ শতাংশ অ্যাপার্টমেন্ট খালি হয়ে পড়ে। ভাড়াটিয়া সংকটের কারণে বাসা ভাড়াও নিম্নমুখী। ব্রুকলিনে গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩.৪ শতাংশ বাসা ভাড়া কমেছে। কুইন্স এলাকার উত্তর-পশ্চিম দিকের বাড়িগুলোতে কমেছে প্রায় ১৩ শতাংশ।
করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে নিউইয়র্ক শহর ছেড়ে অন্যত্র স্থানান্তরের হার ঊর্ধ্বগামী হলেও পরিসংখ্যান বলছে, বেশ কয়েক বছর ধরেই বাসিন্দারা নিউইয়র্ক নগর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। ব্লুমবার্গের তথ্যমতে, গত নয় বছরে নিউইয়র্ক থেকে প্রায় ১০ লাখ বাসিন্দা অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়েছেন। ২০১৮ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, প্রতিদিন প্রায় ২৭৭ জন নিউইয়র্ক ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এত উচ্চ হারে বাসিন্দাদের নিউইয়র্ক ছাড়ার পেছনে প্রধান কারণ হচ্ছে, এখানে জীবনযাত্রার উচ্চ মান ও নিউইয়র্কের উচ্চ কর। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য বড় শহরের তুলনায় নিউইয়র্ক সবচেয়ে বেশি ঘন জনবসতিপূর্ণ, যেখানে প্রতি বর্গমাইলে প্রায় ২৭ হাজার মানুষের বসবাস। নিউইয়র্কে করোনাভাইরাস এত দ্রুত বিস্তারের এটি অন্যতম কারণ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অনেকেই করোনাভাইরাসের ভয়ে অন্যান্য কম জনবসতিপূর্ণ এলাকায় বসবাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। করোনায় বেকার হয়ে পড়ায় এখানে জীবনযাত্রার উচ্চ মানের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হিমশিম খেতে হচ্ছে মানুষকে। মানুষের অন্যত্র স্থানান্তরের ক্ষেত্রে এটি বিরাট প্রভাব ফেলছে বলে মনে করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বাংলাদেশি মার্কিনদের অধিকাংশেরই বসবাস এই নিউইয়র্ক শহরে, যাদের অনেকে ট্যাক্সি, উবার, রেস্টুরেন্ট কিংবা কফি শপে কাজ করে পরিবার চালান। করোনা মহামারির পর থেকে বাংলাদেশিদের মধ্যেও অন্যত্র স্থানান্তরের হিড়িক পড়ছে। যাদের বেশির ভাগই বাফেলো, আলবেনি, মিশিগান, ফিলাডেলফিয়া ও ফ্লোরিডাতে স্থানান্তরিত হচ্ছেন।
তথ্যঃ সংগ্রহীত