হ-বাংলা নিউজ : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণে বিরোধিতা নিয়ে আলেমদের একটি দল ‘আলোচনার মাধ্যমে’ সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন।
সোমবার রাতে বেফাকের সভাপতি মাওলানা মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে ১২ জন শীর্ষ আলেম ধানমণ্ডির বাসভবনে একসঙ্গে বসে মতবিনিময় সভা করা হয়। সেখানে মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ, মাওলানা মাহফুজুল হক, ওবায়দুর রহমান নদভী, নুর আহমেদ কাশেম, রুহুল আমিন, মাওলানা মো. নুরুল ইসলামসহ ১২ জন এবং ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও সচিব উপস্থিত ছিলেন বলে মন্ত্রী জানান।
তিনি বলেন, “আপনারা নিশ্চয়ই শুনেছেন ৫ ডিসেম্বর সারাদেশে শীর্ষস্থানীয় আলেমরা মাহমুদুল হাসানের ডাকে একত্রিত হয়েছিল। সেখানে তারা অনেক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করেছিল- দেশের বর্তমান অবস্থা, তাদের করণীয়।
“এবিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তারা একটি পত্র পাঠিয়েছিলেন এবং সেই পত্রের একটি অনুলিপিও আমাকে দিয়েছেন। সেই পত্রের বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা করার জন্যই সোমবার রাতের মতবিনিময় সভা।“
একটি ফলপ্রসূ আলাপ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আলাপের সিদ্ধান্ত এরকম এই রকম যে, যেসব বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা করেছি, সেগুলি নিয়ে আরো আলাপ-আলোচনা হবে।
“আমরা মনে করি, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই সমস্ত সমস্যা সমাধান করব। ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারব। যে সমস্ত কথাবার্তা আলাপের মাধ্যমে বেরিয়ে এসেছে, এগুলি সবই আমরা ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারব।
“তারাও (আলেম) হৃদয় দিয়ে ধারণ করেন সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি আমাদের জাতির পিতাকে এবং আলেমরাও স্বীকার করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একজন ‘খাঁটি’ মুসলমান। দীর্ঘ আলোচনায় এটুকু সিদ্ধান্ত হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে শেষ করা হবে।“
কোন বিষয়টা ঐকমত্যে এসেছে এবং ভাস্কর্য বিষয়ে আলেমরা কি বলেছেন জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “আমি স্পষ্টই বলেছি, এ বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ আলোচনা করবেন এবং আলাপ শুরু হয়েছে, আলোচনার মাধ্যমে এটা সমাধান হবে। আলেমরা মুজিব মিনার স্থাপনের বিষয়ের অবস্থানেই কি আছে না কি….?
“আলোচনার মাধ্যমেই শেষ হবে। যতটুকু আলোচনা করেছি, আমরা মনে করি একটা সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে এবং আলেমরা এই আবেদন রেখেছে যে, কেউ যেন রাস্তায় নেমে ভাঙচুর না করেন। কেউ যেন এসে কোনো ধরনের শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করেন।“
তিনি বলেন, ফেইসবুকে নানা ধরনের উত্তেজনা ছড়ানোর যে প্রয়াস চলছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে আলেমরাও কথা বলেছেন। এসব জিনিস আলেমরা নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলেছেন।
“আলমরা বলেছেন তারা কোন ধরনের আন্দোলন করবেন না যে পাঁচটি প্রস্তাব দিয়েছেন, সেগুলো আলোচনার মাধ্যমেই সামাধান করবেন। সংবিধানবিরোধী হলে তো এগুলি আমাদের মানার কোনো শক্তি নেই। আমরা সংবিধানের বাইরেও যাব না- কারো ধর্মীয় অনুভূতিতেও আঘাত আনতে চাই না।“
আওয়ামী লীগ ‘নতজানু রাজনীতি’ করে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা সংবিধানের বাইরে কিছু করব না; তার মানে এই নয় যে কোনো ধর্মকে অবজ্ঞা করব। ধর্মীয় সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বিধান মেনে আমরা চলছি এবং চলব।“
তাহলে ভাস্কর্য না মুজিব মিনার স্থাপন করা হবে তা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “ভাস্কর্য কেন হয়? এটাকে পূজা করা হয় না। আমরা বলছি, জন্ম-জন্মান্তরে নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধু কে ছিলেন? বঙ্গবন্ধুর অবদানকে চির স্মরণীয় করে রাখার জন্য, হৃদয়ে ধারণ করার জন্য, জন্মের পর প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুকে ধরে রাখতে চাই।
“আমরা আমাদের কথা বলছি, আলেমরা ধর্মের লাইনে কথা বলেছেন। তাই বলছি আলোচনার মাধ্যমে সুন্দর সমাধান হবে। স্পষ্ট করে বলছি এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি যে ওখানে ভাস্কর্য হবে না, কোন সিদ্ধান্ত হয়নি যে ওখানে মুজিব মিনার হবে। এগুলো আলোচনার মাধ্যমে শেষ হবে।“
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলেমদের সাক্ষাতের প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আলেমরা দেখা করতে চেয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাজি হলে দেখা করবে। তবে আপনারা জানেন কোভিড-১৯ সারা বিশ্ব….। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সুস্থ রাখাও আমাদের দায়িত্ব।“
তথ্যঃ সংগ্রহীত