আকবর হোসাইন, হ-বাংলা নিউজ, আটলান্টিক সিটি থেকে : প্রানঘাতী করোনায় মারা গেলেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের আটলান্টিক সিটির প্রবাসীদের পরিচিতমুখ ও বাংলাদেশ আমেরিকান লায়ন্স ক্লাবের কর্মকর্তা মামুন মোস্তফা। গত ২০ই ডিসেম্বর,২০২০ রবিবার আটলান্টিক সিটির শোর মেমোরিয়াল হাসপাতালে তিনি মারা যান। করোনার মাঝেও তার জানাজায় ছিল ভীড়।তার মৃত্যুতে স্থানীয় প্রবাসীদের মাঝে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।।কাদিয়ে গেলেন পুরো কমিউনিটিকে। সব মৃত্যুই দুংখের কিন্তু কিছু কিছু মৃত্যু পুরো কমিউনিটিকে কাঁদায়।সদা হাস্যজ্জল মামুন মোস্তফার মৃত্যুর সংবাদ শোনার সাথে সাথে পুরো কমিউনিটিতে নেমে এসেছিল শোকের ছায়া। অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েছিল পুরো কমিউটির বাংলাদেশীরা ।পবিত্র কোরআনে বর্নিত আছে “কুল্লু নাফসিন জাইকাতুল মৌট”যার অর্থ প্রত্যেক আত্নাকে মৃত্যুর স্বাদ নিতে হবে।মৃত্যুর কথা ভেবেই হয়ত মসজিদের সামনের সারিতে এসে বসতেন।তার মৃত্যুতে মসজিদ যেমনি হারালো একজন মুসল্লী, ঠিক তেমনি কমিউনিটি হারালো হাস্যজ্জোল একজন কমিউনিটি ব্যক্তিত্বকে।নিজের আচার, ব্যবহারের মাধ্যমে মন জয় করে নিয়েছিলেন ছোট বড় সবার। কখনও কারো সাথে কটু কথা বলেনি । আটলান্টিক সিটির বাংলাদেশীদের সবছেয়ে পুরনো সংগঠন বাংলাদেশ আমেরিকান লায়ন্স ক্লাব আটলান্টিক সিটির ত্রানকর্তা হিসাবে পরিচিত ছিলেন মামুন মোস্তফা। তার একান্ত প্রচেষ্টাই সংগঠনটি দুই যুগ ধরে তার কার্যক্রম চালিয়েছে অবিরামভাবে।আটলান্টিক সিটিতে একমাত্র মামুন মোস্তফাই ছিলেন লায়ন মামুন হিসাবে পরিচিত। রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে যারা পছন্দ করতেন না, তারা সবাই উম্মুখ হয়ে বসে থাকতেন বাংলাদেশ আমেরিকান লায়ন্স ক্লাব আটলান্টিক সিটির প্রতিবছরের পিকনিকের জন্য।পিকনিকের অনুষ্ঠানে তার সূমদুর বক্তব্য দিয়ে মাতিয়ে রাখতেন উপস্থিত সকল বাংলাদেশীদেরকে। ব্যক্তি জীবনে ছিলেন খুবই ফ্যাশন সচেতন। পারিবারিকভাবে বঙ্গবন্ধুর গড়া দল আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও পদ নিয়ে কখনও কারও সাথে বিন্দু মাত্র মন কষাকষিতে লিপ্ত হননি।আটলান্টিক সিটির মানুষের দুঃসময় এবং বিভিন্ন সময়ে সামাজিক সংগঠনগুলোর সংকটকালীন অবস্থা থেকে উত্তরনের জন্য সবসময় প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতেন।
সদালাপী, হাসিখুশী মিশুক এবং সবার ভালবাসার এই মানুষটি নিউজার্সীর Shore Memorial Hospital এ ভর্তির দিন গত ২রা ডিসেম্বর,২০১৯ ভোর চারটা ১১ মিনিটে ফেইজ বুকে একটি পোস্ট দিয়ে সবাইকে জানিয়েছিলেন কভিট-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তির খবর। তিনি লিখেছিলেন ” All my friens and family. I am at the Shore Memorial Hospital ICU for COVID-19 Pneumonia .Please pray for me , So your pray only bring back me to you. Ameen. ভর্তির দিন তিনি পুরো কমিউনিটির কাছে রেখে গিয়েছিলে দোয়ার দরখাস্ত। একই দিন ভোর চারটা আঠার মিনিটে আরেকটি পোস্ট দিয়ে লিখেছিলেন ” Don’t know I will come back or not, If not please forgive me for any misbehavior. হয়ত বুঝতে পেরেছিলেন এই সুন্দর পৃথিবীতে তার আর বেঁছে থাকা হবেনা। তার ভর্তির দিন থেকেই শুরু হয়েছিল সাউথজার্সীতে বসবাসরত কয়েক হাজার বাংলাদেশীদের মধ্যে উৎকন্ঠা।শত শত মানুষের দোয়া এবং ডাক্তাদের আপ্রান চেষ্ঠা শর্তেও করোনার ছোবল থেকে রক্ষা পেলেন না কমিউনিটির অত্যন্ত জনপ্রিয় এবংপরিচিত মূখ মামুন মোস্তফা।দীর্ঘদিনের এই পরিচিত মানুষটি যে আমাদেরকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন সেকথা বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে।
বর্তমানে আটলান্টিক সিটির বাংলাদেশী পরিবারগুলোতে ঘরে ঘরে করোনার হানায় সকলেই আতংকগ্রস্ত। করোনা সংক্রমন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ বেড়েছে পুরো সিটির বাসিন্দাদের মধ্যে। বাংলাদেশী পরিবারগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে করোনার সংক্রমন। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দোয়া চেয়ে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত করছেন মামুন মোস্তফার মৃত্যর পর তার কাছের বন্ধু ফেইজ বুকে লিখেছিলেন আটলান্টিক সিটির বর্তমান কভিট-১৯ এর অবস্থা এবং বাস্তবতা নিয়ে তিনি বলেন”অবিশ্বাস্য সত্যটা মেনে নিতে হচ্ছে এখন সবার। সেটাই সত্য। অদৃশ্য করোনায় জীবন কেড়ে নিচ্ছে কাছের প্রিয় বন্ধু, আত্মীয়, আপন জন অনেককেই। অথচ নিশ্চিত দেখা হবে তাদের সাথে ভাষনা নিয়েইতো থেকেছিলাম। যে বন্ধু বলেছে, সাবধানে থেকে সবাই সবার জন্য দোয়া করতে। সেই বন্ধু নেই, কি ভাবা যায়। যিনি সবচেয়ে সাবধানী ঘরবন্দী থেকে সবাইকে উপদেশ দিতেন সাবধানে থাকতে, তিনিও নেই। হার মেনে যাওয়া ছাড়া কারোরইবা কিছু কি করার আছে, জানা নেই। একটু সাবধানের প্রচেষ্টা ছাড়া। তাও আর কতো? সেখানেও বিভক্তি। এক মহা স্বার্থবাদী দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে অনেককে, অনেকটা বিনা নোটিশে, সাজানো বাগান ফেলে। কঠিন রোগে আক্রান্ত, ধরলেই জীবন শেষ। এমন সম্ভাবনার লোকটিও আবার নেগেটিভের আনন্দে হাঁসছে। আবার সুঠান সুস্বাস্থ্য নিয়ে আক্রান্ত হয়ে ফিরে আসার বাসনা নিয়ে হাসপাতালে গিয়েও নিজের কাছে নিজেই নিখোঁজ নিরুর্দেশ হচ্ছন অনেকে। ফিরে আসছেন কফিনে। সব বিধাতার লিলা খেলা, ভাগ্য। কে কখন বা নিজেই কখন দুঃসংবাদের খোরাক হই, এক মাত্র বিধাতা ছাড়া কে জানে। আঁতকে উঠি যখন মনে হয় মামুন ভাইয়ের জানাজা আগামী কাল। বন্ধুর সাথে আর দেখা হবেনা কোন দিন। এভাবে আরও কতোজন। একমাত্র আল্লাহর কাছেই সমাধান।তিনিই পারেন এই পৃথিবী থেকে বলামছিবত দূর করে দিতে। দিতে পারেন একটা স্বভাবিক জীবন যাপনের দুনিয়া। হে আল্লাহ আমাদের গুনা মাফ করে দিন। মৃত প্রিয় সবাইকে বেহেস্ত দিন। সব বলা মছিবত দূর কিরে দিন। মহামারীতে কোন মুসলিমের মৃত্যু হলে সে শহীদি মর্যাদা পায়। ইয়া আল্লাহ আপনি মরহুমকে শহীদের মর্যাদা দান করুন। আমিন।