হ-বাংলা নিউজ : সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাচ্ছেন অনেক বাংলাদেশি অভিবাসী। তবে এদের বেশির ভাগই বসবাস করেন নিউইয়র্ক শহরে।
নিউইয়র্ক নগরে তিন লাখের বেশি বাংলাদেশি অভিবাসী বসবাস করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য শহরে বসবাস করা বাংলাদেশি অভিবাসীর তুলনায় যা অনেক বেশি। নথিপত্রহীন বা অনিবন্ধিত বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখ্যাও এই নিউইয়র্কে সবচেয়ে বেশি।
দা মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, নিউইয়র্ক নগরে প্রায় ১৯ হাজার অনিবন্ধিত বাংলাদেশি অভিবাসীর বসবাস। জীবনযাত্রার উচ্চমান, ঘর-বাড়ির আকাশসম দাম উপেক্ষা করেও নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত বাংলাদেশিরা নিউইয়র্কে বসবাস করছে। বাংলাদেশিদের এই নিউইয়র্ক প্রীতির কারণ অনেকটাই রহস্য।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি অভিবাসী আসার সংখ্যা বাড়তে থাকে। এদের বেশির ভাগই ডাইভার্সিটি ভিসা (ডিভি), ওপি-ওয়ান ও পারিবারিক ভিসায় এদেশে এসেছে বা আসছে। আবার অনেকে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অবৈধভাবে জাহাজে করে এদেশে পাড়ি জমিয়েছে, যাদের বেশির ভাগই থিতু হয়েছেন নিউইয়র্ক শহরে। কারণ, তৎকালীন সময়ে অভিবাসী হিসেবে সবচেয়ে সহজে পা রাখা যেত এই নগরে। একদম শুরুর দিকে ১৮৫৫-১৮৯০ সালের দিকে নিউইয়র্কের ক্যাসল গার্ডেন বন্দর ছিল সরকারিভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম অভিবাসী কেন্দ্র।
সেই থেকেই বাংলাদেশিরা নিউইয়র্ক শহরে বসতি শুরু করে। আদি পুরুষের সূত্র ধরেই এই নগরে বা রাজ্যে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখ্যা। তবে এই নগরে বাংলাদেশি অভিবাসী বৃদ্ধির প্রথম ও প্রধান কারণ হচ্ছে পারিবারিক সূত্র।
অন্যান্য দেশের অভিবাসীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে একটি অগ্রসর অভিবাসী গোষ্ঠী হিসেবে নিউইয়র্কে এরই মধ্যে বাংলাদেশি মার্কিনরা নিজেদের অগ্রসরতার ছাপ রেখে চলেছে। শিক্ষা-দীক্ষা ও চাকরিতে এগিয়ে চলেছে তারা। যখন বাংলাদেশি মার্কিনদের কথা বলা হয়, তখন অনিবন্ধিত বাংলাদেশি অভিবাসীরা অনেকটাই পর্দার আড়ালে থেকে যান। চকচক করলেই যেমন সোনা হয় না, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রে আসলেই যে জীবন সুন্দর হয়ে যায় না, তার মোক্ষম প্রমাণ এসব অনিবন্ধিত অভিবাসী। শত অনিশ্চয়তা ও বাধা-বিপত্তির সঙ্গে লড়াই করে অনিবন্ধিত অভিবাসীরা স্বপ্ন দেখে এ দেশে একদিন থিতু হয়ে যাওয়ার। কিন্তু তাদের অমসৃণ পথ আর হাড়ভাঙা খাটুনির কথা কজনই বা জানতে পারে।
অনিবন্ধিত অভিবাসীদের বেশির ভাগই নিউইয়র্কের বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ও ডানকিন ডোনাটস নামক কফি শপে নামমাত্র মজুরিতে নগদ অর্থে দিনে ৮-১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করে থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মীরা যেকোনো সময় এসব জায়গায় হানা দিতে পারে—এ জন্য সব সময় তাদের ধরপাকড়ের ভয়ে থাকতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ অভিবাসীরা যেখানে সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা যেমন ফুড স্ট্যাম্প, মেডিকেইড, পাবলিক হাউস প্রকল্প ইত্যাদি পেয়ে থাকেন, সেখানে অনিবন্ধিত অভিবাসীরা এসব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ফলে টিকে থাকার জন্য আরও কঠোর পরিশ্রম করতে হয় তাদের।
করোনা মহামারির পর অন্যান্য সবার মতো বৈধ বাংলাদেশিরা মার্কিন ফেডারেল সরকারের দেওয়া স্টিমুলাস চেক, সাপ্তাহিক ৬০০ ডলার এবং বেকার ভাতা পেয়ে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করেছেন। কিন্তু অনিবন্ধিত অনেক অভিবাসীকে কাজ হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়েছে। করোনা মহামারির পর থেকে নিউইয়র্কে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হলেও চিকিৎসাক্ষেত্রে অনিবন্ধিত অভিবাসীদের বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর অভিবাসন সংক্রান্ত আইনে পরিবর্তন আনবেন—অন্যান্য দেশের অনিবন্ধিত অভিবাসীর মতো এমনটাই আশা করছেন অনিবন্ধিত বাংলাদেশি অভিবাসীরাও।
তথ্যঃ সংগ্রহীত