হ-বাংলা নিউজ : করোনাভাইরাসের প্রথম ঢেউয়ে হিমশিম অবস্থা ছিল নিউইয়র্ক নগর কর্তৃপক্ষের। করোনায় মৃতদের সৎকারে তাদের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তাই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ঘিরে আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে নিউইয়র্ক কর্তৃপক্ষ।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের এপ্রিলের শেষের দিকে নিউইয়র্ক নগরের ব্রুকলিন পিয়ারে দীর্ঘমেয়াদি হিমাগার সুবিধা চালু করা হয়। এই হিমাগারে একসঙ্গে অন্তত ১ হাজার ৫০০ মৃতদেহ রাখা যাবে।
দক্ষিণ ব্রুকলিনের সামুদ্রিক টার্মিনালে ‘ফিউনারেল পরিচালক’ লেখা একটি সাইন দেওয়া আছে। এই সাইন ধরে সামনে এগোলে বড় একটি ওয়্যারহাউসের দেখা মেলে। এতে একেকটি ৫৩ ফুট দীর্ঘ ২০টি হিমায়িত ট্রেলার রয়েছে। সারিবদ্ধভাবে এগুলো পার্ক করে রাখা।
নিউইয়র্ক নগরের কর্মকর্তারা মনে করেন, এই নতুন হিমাগার তাদের কোভিড-১৯-এর প্রথম ঢেউয়ের সবচেয়ে মর্মান্তিক ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি এড়াতে সহায়তা করবে। মৃতদেহ সৎকার ও সংরক্ষণে নগর কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা বাড়াবে।
পিয়েরের এই হিমাগারে চলতি মাসের শুরুর দিকে প্রায় ৫৭০টি মৃতদেহ ছিল, যার বেশির ভাগ কয়েক মাস ধরে সেখানে সংরক্ষণ করে রাখা ছিল। আরও কয়েক শ মৃতদেহ রাখার জায়গা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিউইয়র্কের অবস্থা দেখে অনেক রাজ্য ও শহর অতিরিক্ত মর্গের ক্ষমতা বাড়াতে হিমায়িত ট্রেলার তৈরি করে ব্যবহার করছে। টেক্সাসে নভেম্বরের শুরুতে এল পাসোতে ১০টি হিমায়িত ট্রেলার সরবরাহ করা হয়েছিল। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন, রাজ্যে অস্থায়ী মর্গ হিসেবে ৬০০টি হিমায়িত ট্রেলার রয়েছে।
তবে এখনো অন্য কোনো শহরে এতটা মারাত্মক পরিস্থিতি হয়নি যে, মৃতদেহ কয়েক মাস ধরে ফেলে রাখতে হয়েছে।
নিউইয়র্ক নগরে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর ১৪ মার্চ থেকে ১৮ জুনের মধ্যে ১৭ হাজার ৫০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এপ্রিলের শুরুতে একদিনেই মৃত্যু হয়েছিল ৮০০ জনের।
নগরের হাসপাতালগুলোর আশপাশের সড়কে ১৩৫টির বেশি রেফ্রিজারেটেড ট্রেলার রাখা হয়েছিল। তবে তা পর্যাপ্ত ছিল না। এটি শহরের সংকটের অন্যতম স্থায়ী চিত্র হয়ে উঠেছিল। মৃতদেহ রাখার শেলফগুলো ট্রেলারে স্থাপন করা হয়েছিল। শেষকৃত্যের প্রতিষ্ঠানগুলোতে মৃতদেহ রাখার রুম না পাওয়ায় ট্রেলারে ধারণক্ষমতা দ্বিগুণ করা হয়েছিল। মৃত্যুর পরিমাণ এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, ফিউনারেল প্রতিষ্ঠানগুলো মৃতদেহ সমাহিত করতে পারছিল না।
ব্রুকলিনের একটি হাসপাতালের মর্গের ট্রেলারে মৃতদেহ তুলতে ফর্কলিফ্ট ব্যবহার করা হয়েছিল। ইউ-হলের লাশবাহী ট্রাকে পচা মৃতদেহ স্তূপ করে রাখা অবস্থায় ধরা পড়েছিল। এর কয়েক সপ্তাহ পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। সমাহিত করার সুযোগ না থাকায় সাউথ ব্রুকলিনের মর্গগুলো আরও মৃতদেহে ভরে যায়। মাসের পর মাস মৃতদেহ ফ্রিজারে পড়ে থাকে।
ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ করোনারস অ্যান্ড মেডিকেল এক্সামিনারের নির্বাহী পরিচালক জন ফুডেনবার্গ বলেন, এখন তারা যেসব ফ্রিজার এনেছেন, তাতে দীর্ঘদিন মৃতদেহ সংরক্ষণ করা যাবে। পরীক্ষা করে এর সুফল পাওয়া গেছে। তিনি মনে করেন, ভবিষ্যতে এগুলো ভালো কাজে দেবে, কারণ সাময়িকভাবে দাফনের চেয়ে এটি সামাজিকভাবে বেশি গ্রহণযোগ্য হবে।
করোনার প্রথম ঢেউ মৃতদেহ নিরাপদে সংরক্ষণে রাখার বিষয়ে সবাইকে কঠিনতম শিক্ষা দিয়েছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর আগে হাসপাতাল, ফিউনারেল ডিরেক্টর ও নগরের মেডিকেল এক্সামিনাররা বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করে নতুন এই উপায় বের করেছেন।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা আশা করছেন, করোনার প্রথম ঢেউয়ের মতো দ্বিতীয় ঢেউ ততটা নাজুক হবে না। কারণ, সরকার বিষয়টি নিয়ে আগের চেয়ে বেশি সতর্ক, তা ছাড়া টিকা এসেছে। গ্রেটার নিউইয়র্ক হাসপাতাল অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবমতে, একেকটি হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ মর্গে ১৫টি মৃতদেহ রাখা যায়। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি এসব মর্গের প্রায় ২৫ শতাংশ মৃতদেহে ভর্তি ছিল। তবে ফিউনারেল ডিরেক্টররা এখনো জমা থাকা মৃতদেহের হিসাব দেয়নি।
নগরের প্রধান মেডিকেল এক্সামিনার ডা. বারবারা সাম্পসন বলেন, ‘আমরা সব সময় খারাপ অবস্থার কথা মাথায় রেখে পরিকল্পনা করে থাকি। আমি আত্মবিশ্বাসী, আমরা করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত। তবে আমার আশা, আমরা বসন্তে যে ধরনের পরিস্থিতিতে পড়েছিলাম, ভবিষ্যতে তেমন হবে না।’
একাধিক ফিউনারেল ডিরেক্টর বলেছেন, ‘এখনো শহরে প্রতিদিন গড়ে প্রায় দেড় শ মানুষের মৃত্যু হয়। সুতরাং কোভিড-১৯-এর কারণে প্রতিদিন এক শ অতিরিক্ত মানুষ মারা গেলে মৃতদেহ সৎকারে তারা চাপে পড়ে যেতে পারেন।
তথ্যঃ সংগ্রহীত