হ-বাংলা নিউজ : ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদরদপ্তর ব্রাসেলসের স্থানীয় সময় ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা এক মিনিটে বিদায় নেয় যুক্তরাজ্য। এই বিদায় কেবল ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বিদায় নয়, ব্যবসা-বাণিজ্য বিশেষ করে চলাফেরার স্বাধীনতারও বিদায়।এখন ব্রিটেন থেকে ইইউভুক্ত যে কোনো যাতায়াতে ভিসা লাগবে।
বিদায় স্বাধীনতা!
ইংরেজি নতুন বছরের বক্তৃতায় ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, ব্রিটেন একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে নিজেকে সমৃদ্ধ করবে। আর ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ ব্রেক্সিটকে (ব্রিটেন এক্সিট) একটি মিথ্যা অঙ্গীকার বলেই সম্বোধন করেছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ত্যাগে ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর জনগণের স্বাধীনতা, বিশেষ করে চলাফেরার স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হলো।
যুক্তরাজ্যের মানুষ ইউরোপে স্বাধীনভাবে যাতায়াত করতে পারবেন না। ভিসা করেই ইউরোপের যে কোনো দেশে প্রবেশ করতে হবে। চুক্তি অনুযায়ী, ১৮০ দিনের মধ্যে ৯০ দিন টানা কোনো যুক্তরাজ্যের মানুষ ইউরোপের কোনো দেশে থাকতে চাইলে তাকে ভিসা করাতে হবে। অন্যদিকে ইউরোপের কোনো মানুষ যুক্তরাজ্যে টানা ছয় মাস ভিসা ছাড়া থাকতে পারবেন। এর বেশি থাকতে চাইলে তাকে ভিসা করাতে হবে। ইউরোপ থেকে যুক্তরাজ্যে এসে কাজ করতে চাইলে অথবা যুক্তরাজ্য থেকে ইউরোপে গিয়ে কাজ করতে চাইলে ওয়ার্ক ভিসা করাতেই হবে। এছাড়া ইইউ বা যুক্তরাজ্যের কোনো বাসিন্দার যদি কোনো চাকরি, ব্যবসা বা অবসরভাতার মতো কোনো বিষয় কিংবা বাবা-মায়ের রেখে যাওয়া সম্পদ থাকে, সেগুলো তাদেরই থাকবে। গত মাসে ইউরোব্যারোমিটার জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ৮১ শতাংশ ইউরোপীয়ান মনে করেন, চলাফেরার স্বাধীনতা না থাকায় বাণিজ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বর্তমানে ব্রিটেনের ১৩ লাখ নাগরিক ইইউতে বাস করছেন।
বাণিজ্য চুক্তিতে আরো যা আছে
আনুষ্ঠানিক বিদায়ের আগে একটি বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তিতে অনেক বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। যেমন—
শূন্য শুল্ক : যুক্তরাজ্য ইইউর বাজার ছাড়ার পর পণ্যের শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের সুবিধা দেবে এই চুক্তি। এর ফলে ২০২১ সালের জানুয়ারিতেও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নির্বিঘ্নে চলবে, ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে। মদ, অর্গ্যানিকস, অটোমোটিভ ফার্মাসিউটিক্যালস এবং কেমিক্যালের মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পগুলোর জন্য কিছু বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে এ চুক্তিতে।
বিমান চলাচল এবং নিরাপত্তাজনিত সহযোগিতা : যুক্তরাজ্যের যাত্রীবাহী বিমানগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়নে আগের মতো মুক্তভাবে যাতায়াতের অধিকার হারাবে। এখন থেকে দুই পক্ষ পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে বিমানের নিরাপদ চলাচল, নিরাপত্তা এবং এয়ার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবে।
ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারদের স্বীকৃতির প্রশ্ন : ইইউ এবং যুক্তরাজ্যের ডাক্তার, নার্স, ফার্মাসিস্ট, ইঞ্জিনিয়ার এবং এমন আরো কিছু পেশাজীবী যে আগে অবাধ স্বীকৃতি পেতেন, সেই সুযোগ আর থাকবে না।
জ্বালানি সহযোগিতা : ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ জ্বালানি বাজার, ইউরোপিয়ান অ্যাটমিক এনার্জি কমিউনিটি এবং ইইউর অ্যামিশন ট্রেডিং সিস্টেম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে ব্রিটেন।
বিজ্ঞান ও গবেষণা : শিক্ষা, গবেষণা এবং প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এরাসমুস ইউনিভার্সিটি প্রোগ্রাম, গ্যালিলিও স্যাটেলাইট সিস্টেমসহ সব কর্মসূচি বন্ধ করবে যুক্তরাজ্য। তবে হরাইজন ইউরোপ, দ্য ইউরাটম রিসার্চ এবং ট্রেনিং প্রোগ্রামসহ ছয়টি কর্মসূচির সঙ্গে থাকবে ব্রিটেন।
ট্রাক যাতায়াত : যুক্তরাজ্যের ট্রাক আর আগের মতো অবাধে সীমান্ত পেরিয়ে ইইউতে আসতে পারবে না। তবে একটি স্থান থেকে আরেকটি স্থানে যাতায়াতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এই চুক্তিতে।
ইউরোপোলের সঙ্গে সহযোগিতা : ইউরোপোল এবং ইউরোজাস্টের মতো এজেন্সিকেও ছেড়ে যাবে যুক্তরাজ্য। এছাড়া ইইউর ডাটাবেজে প্রবেশের অধিকারও হারাবে।
ভবিষ্যতে কি আবার ইইউতে ফিরবে ব্রিটেন?
ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের ব্রেক্সিট কো-অর্ডিনেটর গাই ভেরহফস্টাট বলেছেন, তিনি নিশ্চিত করতে চাইবেন ইইউ যেন এমন এক প্রকল্প হয়ে ওঠে যে যুক্তরাজ্য ভবিষ্যতে আবার এর অংশ হতে চাইবে। স্ট্র্যাথক্লাইড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক স্যার জন কার্টিস বলছেন, যদিও ২০১৬ সালের গণভোটে ৫২ শতাংশ ব্রিটিশ ভোটার ইইউ ত্যাগের পক্ষে ছিলেন এবং ২০১৯-এর ডিসেম্বরের নির্বাচনেও ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের স্লোগান দিয়ে বরিস জনসন বিপুল বিজয় পেয়েছেন, জনমত জরিপে এখন বেশির ভাগ মানুষ ইইউতে থাকার পক্ষে।
তথ্যঃ সংগ্রহীত