হ-বাংলা নিউজ : গ্রেপ্তারের ঝুঁকি নিয়েই স্বদেশে ফিরেছিলেন রাশিয়ায় বিরোধীদলীয় নেতা অ্যালেক্সি নাভালনি; আর মস্কোয় নামার সঙ্গে সঙ্গেই আটক হলেন তিনি।
পুতিনবিরোধী এই নেতা আটক হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে বিমানবন্দরে উপস্থিত তার সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, “আমি জানি, আমি সঠিক পথে আছি। আমি কিছুতেই ভয় করি না।”
গত বছর বিষপ্রয়োগে অসুস্থ হয়ে পড়ার পাঁচ মাস পর নাভালনি এই প্রথম রাশিয়ায় ফিরলেন। জার্মানির বার্লিন থেকে উড়োজাহাজে রওনা হয়েছিলেন তিনি।
সিএনএন জানায়, নাভালনি ও তার স্ত্রী স্থানীয় সময় রাত ৮টার পরই মস্কোর শেরেমিতিয়েভো বিমানবন্দরে নামেন। তবে তাদের বিমান নামার কথা ছিল নুকোভো বিমানবন্দরে; সেখানে তাদেরকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত হয়েছিল শত শত সমর্থক।
নাভালনির বিমান সেখানে নামতে না দিয়ে শেরেমিতিয়েভোয় সরিয়ে নেওয়া হয়। নুকোভো বিমানবন্দরে পুলিশ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং টার্মিনাল থেকে লোকজনকে সরিয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
মস্কো বিমানবন্দরে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়। স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বিমানবন্দরের ভেতরে ধাতব ব্যারিয়ারও দেওয়া হয়। অন্তত একজন বিক্ষোভকারীকে আটক হন সেখানে।
নাভালনির প্রেস সচিব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কয়েকটি ছবি পোস্ট করেছেন, ছবিতে বিমানবন্দরে পুলিশের গাড়ি দেখা গেছে।
মস্কোয় এখন প্রচণ্ড ঠাণ্ডা পড়েছে। তার মধ্যেও নাভালনির হাজার হাজার সমর্থক তার সঙ্গে দেখা করতে বিমানবন্দরে উপস্থিত হন।

পোবেদা এয়ারলাইনের একটি ফ্লাইটে দেশের পথে রওয়ানা হওয়ার আগে নাভালনি বলেছিলেন, “নিশ্চয়ই সবকিছু ভালোই হবে। আজ আমি খুব খুশি।”
তার অভিযোগ, ক্রেমলিন ইচ্ছা করে তার ফেরার দিন নুকোভায় পপ তারকার কনসার্ট রেখেছে এবং জনগণকে সেখানে যেতে উৎসাহিত করেছে। যাতে বিমানবন্দরে তার ভক্তের সংখ্যা কম থাকে।
গত বছর অগাস্টে একটি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে সার্বিয়া থেকে মস্কো ফেরার সময় এককাপ চা পানের পরই অসুস্থ হয়ে কোমায় চলে গিয়েছিলেন ৪৪ বছর বয়সী নাভলনি। বিমানবন্দর থেকে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
অবস্থার পরিবর্তন না হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে জার্মানি নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই পরীক্ষায় জানায় যায়, সোভিয়েত আমলে তৈরি বিষাক্ত নার্ভ এজন্টে নোভিচক দিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল।
নাভালনি ও তার সমর্থকদের অভিযোগ, রুশ সরকার বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশেই তাকে রাসায়নিক বিষ প্রয়োগে মারার চেষ্টা করা হয়।
অবশ্য ক্রেমলিন ওই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করেছে। পুতিন বলেছেন, যদি রুশ এজেন্টরা তাকে হত্যা করতেই চাইতে, তবে ‘তারা অবশ্যই তাদের কাজ শেষ করত’।
বার্লিনের একটি হাসপাতালে দীর্ঘদিনের চিকিৎসায় সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছেন নাভালনি। তার স্বাস্থ্যও প্রায় আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে।
গত বুধবার নিজের ইন্সটাগ্রামে এক পোস্টে রাশিয়ায় ফেরা এবং পুনরায় রাজনীতি শুরুর কথা জানান এই নেতা। ক্রেমলিন থেকেও তার ফেরার বিষয়ে কোনও আপত্তি নেই বলে জানানো হয়।
তবে ক্রেমলিন মুখে যাই বলুক, বাস্তবে ভিন্ন চিত্রই দেখা যাচ্ছে। নাভালনি দেশে ফিরলেই গ্রেপ্তার হতে পারেন বলে শঙ্কা ছিল।
রাশিয়ার কারা বিভাগ আগেই জানিয়েছিল, ২০১৪ সালের একটি মামলায় স্থগিত দণ্ডের শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগে মস্কোতে ফেরামাত্র নাভালনিকে গ্রেপ্তার করা হবে।
তথ্যঃ সংগ্রহীত